নরমাল ডেলিভারির জন্য যেসব আমল করা উচিত

নরমাল ডেলিভারির জন্য যেসব আমল করা উচিত অবশ্যই একজন নারীর ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো জানা উচিত। কারণ বেশিরভাগ গর্ভবতী নারী চাই তাদের সন্তান নরমাল ডেলিভারিতে হোক। নরমাল ডেলিভারির জন্য যেসব আমল করা উচিত তা জেনে অবশ্যই আমলগুলো করা উচিত। আজকের এই আর্টিকেলে নরমাল ডেলিভারির জন্য যেসব আমল করা উচিত সেগুলো আপনাদের বিস্তারিত জানাবো।

তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট নরমাল ডেলিভারির জন্য যেসব আমল করা উচিত তা জেনে নেওয়া যাক। উক্ত বিষয়টি জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সূচিপত্রঃ নরমাল ডেলিভারির জন্য যেসব আমল করা উচিত

নরমাল ডেলিভারির জন্য যেসব আমল করা উচিত জেনে রাখুন

বর্তমান যুগে নরমাল ডেলিভারি ছাড়াও সিজার করে পেট থেকে বাচ্চা বের করা হয়। কিন্তু প্রাচীনকালে এ পদ্ধতিটি ছিল না তখন শুধুমাত্র নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান জন্ম দেওয়া হতো। চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নতি হওয়ার কারণে এ ধরনের নতুন নতুন পদ্ধতি বের হয়েছে। কিন্তু সিজার করলে নারীদের শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। তাই বেশিরভাগ নারী চাই তাদের সন্তান নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে হোক।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে - গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবেনা

আমরা যারা মুসলিম রয়েছে সাধারণত তারা নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য বিভিন্ন রকমের আমল করে থাকি। আল্লাহতালার কাছে দোয়া চাই যেন আমাদের সন্তান নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে হোক। আপনি যদি সন্তান গর্ভধারণ করে থাকেন তাহলে নরমাল ডেলিভারির জন্য যেসব আমল করা উচিত সেগুলো অবশ্যই আপনার জানা উচিত।

প্রত্যেক গর্ভবতী নারীর প্রত্যাশা থাকে যে তার ডেলিভারি নরমালে হোক। যেহেতু আমাদের সবকিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। সেহেতু যে কোন কিছু চাইতে হলে আমাদের একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছেই যাইতে হবে। আমরা আমাদের নরমাল ডেলিভারি হোক এটা আল্লাহতালার কাছে দোয়ার মাধ্যমে চাইতে পারি।

যে সময় আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া কবুল হয় সেই সময়গুলোতে আল্লাহ তাআলার কাছে নরমাল ডেলিভারির জন্য যেসব আমল করা উচিত সেগুলো করতে হবে। দোয়া কবুলের কিছু নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। এই সময়গুলোতে যদি আল্লাহতালার কাছে দোয়া করা যায় তাহলে আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দার দোয়া সহজে কবুল করে থাকেন।

দোয়া কবুলের সময় গুলো হলঃ

  • শেষ রাতের দোয়া
  • আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় দোয়া
  • সেজদার সময় দোয়া
  • ইফতারের সময় দোয়া
  • ফজরের নামাজের পর দোয়া
  • জুম্মার দিন আসর নামাজের পর দোয়া
  • বৃষ্টির সময় দোয়া
  • শবে কদরের রাতে ও হজের মৌসুমে দোয়া

এ সময়গুলোতে যদি আল্লাহতালার কাছে নেক মনে এবং দোয়া করার নিয়ম অনুযায়ী দোয়া করা হয় তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দার দোয়া কবুল করে থাকেন। গর্ভবতী মা যদি আল্লাহতালার কাছে কিছু চাই তাহলে অবশ্যই সে যেন উক্ত সময়গুলোতে আল্লাহতালার কাছে দোয়া করে থাকে।

গর্ভবতী মায়ের আমল - নরমাল ডেলিভারির জন্য আমলসমূহ

গর্ভাবস্থায় নারীরা কাজ করতে পারে না যার ফলে বেশিরভাগ সময় তারা শুয়ে বসে থেকে সময় পার করে। অনেক সময় শুয়ে বসে থাকতে ভালো লাগে না যার ফলে তারা নরমাল ডেলিভারির জন্য আমলসমূহ সম্পর্কে জানতে চাই। গর্ভবতী মায়ের আমল সম্পর্কে জেনে সেগুলো করা একজন গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নরমাল ডেলিভারির জন্য আমলসমূহ নিয়ে আজ আলোচনা হবে।

আমরা জানি যে আল্লাহ তাআলার কাছে বেশ কিছু সময় রয়েছে যে সময়গুলোতে তিনি দোয়া কবুল করে থাকেন। আমরা যদি আল্লাহ তাআলার কাছে পবিত্র মনে কিছু চাই সে সময় গুলোতে দোয়া করতে হবে। তাহলে আল্লাহ তায়ালা খুব সহজেই আমাদের দোয়া কবুল করবেন। ইতিমধ্যেই দোয়া কবুলের সময় উল্লেখ করা হয়েছে।

একজন নারীর ডেলিভারির সময় যত ঘনিয়ে আসবে তত বেশি বেশি দরুদ পাঠ করতে হবে। দরুদ এর সাথে ইস্তেগফার ও দোয়া ইউনুস করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অনেক আলেমগণ। এ অবস্থায় অবশ্যই গর্ভবতীর মাকে দান সাদকা করতে হবে। এতে করে আল্লাহ তায়ালা বান্দার যে কোন মুসিবদ্ধ চিন্তা ও দুঃখ-কষ্ট কমিয়ে দেবে এবং কঠিন পরিস্থিতি থেকে আমাদের রক্ষা করবে।

আল্লাহ তা'আলা বলেন, " আমি মানুষকে তার মা-বাবা সম্পর্কে জোর নির্দেশ দিয়েছি, কেননা না তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে পেটে বহন করেছেন আর তার দুধ ছাড়ানোর হয় দুই বছরে, তুমি শোকর আদায় কর আমার এবং তোমার পিতামাতার। আমার কাছে তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে।"{ সূরা লোকমানঃ ১৪}

গর্ভের সন্তান একজন নারীর জন্য কখনোই বোঝা হয় না বরং এটি একজন নারীর জন্য সম্মানের এবং গৌরবের। গর্ভবতী নারীর সম্পূর্ণ মনোযোগ থাকে তার সন্তানের ওপর। কোরআন এবং হাদীসে একজন গর্ভবতী মায়ের পরিপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। একজন গর্ভবতী নারীর কর্তব্য হলো তার অনাগত সন্তানের জন্য সব সময় দোয়া প্রার্থনা করা।

গর্ভাবস্থায় হযরত মারিয়ম আঃ এর মায়ের আমল থেকে শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে। মারিয়াম আঃ এর জন্মের পূর্বে যখন তার গর্ভধারিনী মাকে সন্তানের ব্যাপারে সুসংবাদ দেওয়া হল তখন তিনি মহান প্রভুর দরবারে যে দোয়াটি করেছিলেন সেটি সূরা আলে ইমরানের ৩৫ নম্বর আয়াতে বিদ্যমান রয়েছে।

আরো পড়ুনঃ ব্লাড ক্যান্সার হলে কি হয় - ১০ টি ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায়

বলা হয়েছে, " ইমরানের স্ত্রী যখন বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমার গর্ভে যা রয়েছে আমি তাকে তোমার নামে উৎসর্গ করলাম। সবার কাছ থেকে মুক্ত রেখে। আমার পক্ষ থেকে তুমি তাকে কবুল করে নাও। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী সর্বজ্ঞাত।" মারিয়াম আঃ এর মায়ের দোয়া আল্লাহ তালা কবুল করে নিয়েছিলেন। আশা করি গর্ভবতী মায়ের আমল সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন।

নরমাল ডেলিভারির জন্য দোয়া - গর্ভবস্থায় নরমাল ডেলিভারি হওয়ার কুরআনী আমল ও দোয়া

আমরা ইতিমধ্যে নরমাল ডেলিভারির জন্য যেসব আমল করা উচিত তা জেনেছি। একজন নেককার নারী নরমাল ডেলিভারির জন্য দোয়া করতে থাকে আল্লাহতালার কাছে সব সময়। কারণ আমাদের প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং সবকিছু মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তাই গর্ভবতী নারীর জন্য গর্ভবস্থায় নরমাল ডেলিভারি হওয়ার কুরআনী আমল ও দোয়া সম্পর্কে অবশ্যই জানা প্রয়োজন এবং আল্লাহতালার কাছে নরমাল ডেলিভারির জন্য দোয়া করা।

পবিত্র কুরআনের সূরা রাদের ৮ নম্বর আয়াত, সূরা ফাতির ১১ নম্বর আয়াত এবং সূরা নাহাল ৮৭ নম্বর আয়াত ও সূরা যিলযাল পড়ে গর্ভবতী মহিলাকে ফু দেওয়ার পরামর্শ দেন। অনেক ইসলামিক চিন্তাবিদ বলে থাকেন, গর্ভবতী সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে কষ্টের সময় উল্লেখিত আয়াতগুলো পড়ার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা অনেককে উপকার করে থাকেন।

আমরা জানি যে আল্লাহ তাআলার গুণবাচক রয়েছে অনেকগুলো। আল্লাহর গুণবাচক নাম যেমন আল-মুবদিয়ু এর অর্থ হল প্রথমবার সৃষ্টিকারী। আল্লাহ তায়ালার এই গুণবাচক নামটি জিকিরের মাধ্যমে গর্ভের সন্তান হেফাজতে থাকে এবং আল্লাহতালা এই আমলের দ্বারা গর্ভবতী মায়ের গর্ভে সন্তানকে সুস্থ রাখে এবং নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে পৃথিবীতে আগমন করায়।

গর্ভবস্থায় নরমাল ডেলিভারি হওয়ার কুরআনী আমল ও দোয়া কোরআন অথবা হাদিসে বর্ণিত হয়নি। তবে গর্ভবতী নারীর গর্ভকালীন সময় সন্তান প্রসব মূলত সহ্য করার বিষয় এবং এতে অনেক স্বভাব এবং পুরস্কার এর ঘোষণা করা হয়েছে। তবুও অনেকগুলো আমল রয়েছে যেগুলো গর্ভাবস্থায় নারীদের করা উচিত। বেশি বেশি করে আল্লাহতালার নাম নেওয়া এবং জিকির করা।

এই সময় যদি কোন নারীর মৃত্যুবরণ করে তাহলে নবীজি ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহতালা সেই গর্ভবতী মাকে শহীদের মর্যাদা দান করবেন। এর জন্য অবশ্যই তার ঈমান থাকতে হবে। কোন মুনাফিক সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মারা গেলে এমনটা হবে না। এই সময় কোরআন খতম করা, নফল নামাজ আদায় করা, আল্লাহ তায়ালার জিকির করা এবং দান সাদকা করা।

সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে কোন জটিলতা দেখা দিলে যে আমলগুলো করবেন

অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় জটিলতা দেখা যায়। সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে কোন জটিলতা দেখা দিলে যে আমলগুলো করবেন অবশ্যই সেগুলো সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকতে হবে। আমরা সাধারণত আল্লাহতালার কাছে নরমাল ডেলিভারির জন্য যেসব আমল করা উচিত সে আমলগুলো করব। এতে করে আল্লাহতালা যদি চান তাহলে আমাদের সন্তান সুন্দর করে পৃথিবীতে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে আসবে।

যদি কখনো সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় জটিলতা দেখা যায় তখন সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে কোন জটিলতা দেখা দিলে যে আমলগুলো করবেন? তা নিচে উল্লেখ করা হলো।

যখন সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় হবে তখন বেশি বেশি করে আল্লাহ তায়ালার জিকির করতে হবে। একজন নারী যখন সন্তান জন্ম দিবে তখন সে যেন নিজের সুরার আয়াতগুলো পাঠ করে এবং নিজের গায়ে ফু দেয়। আয়াতগুলো হলঃ

  • সূরা রাদের ৮ নম্বর আয়াত
  • সূরা ফাতির ১১ নম্বর আয়াত
  • সূরা নাহাল ৮৭ নম্বর আয়াত ও সূরা যিলযাল

একজন মহিলা এই আয়াতগুলো পাঠ করে সন্তান প্রসবকালীন সময় পেটের উপরে ফু দেবে। অথবা তার পাশে থাকার যে কোন মানুষ এই সূরার আয়াতগুলো পাঠ করে পানিতে ফু দিবে এবং সেই পানি গর্ভবতীকে পান করাবে অথবা তার শরীরে মালিশ করবে। এতে করে আল্লাহ তায়ালা গর্ভবতী নারীর কষ্টকে অনেক কমিয়ে দেবে।

আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের ফল খাওয়ার তালিকা - গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন, "আল্লাহতালার ৯৯ টি গণ নাম রয়েছে। যে ব্যাক্তি এই গুণবাচক নাম গুলোর জিকির করবে সে জান্নাতে যাবে।" বিশেষ করে একজন গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে এই আমল গুলো করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নাম গুলো নিলে আল্লাহ তায়ালা সন্তান জন্ম দেওয়া সময় কষ্টকে সহজ করে দেয়।

আমাদের শেষ কথাঃ নরমাল ডেলিভারির জন্য যেসব আমল করা উচিত

প্রিয় পাঠক গন আজকের এই আর্টিকেলে সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে কোন জটিলতা দেখা দিলে যে আমলগুলো করবেন, গর্ভবস্থায় নরমাল ডেলিভারি হওয়ার কুরআনী আমল ও দোয়া, নরমাল ডেলিভারির জন্য দোয়া, নরমাল ডেলিভারির জন্য আমলসমূহ, গর্ভবতী মায়ের আমল, নরমাল ডেলিভারির জন্য যেসব আমল করা উচিত এ বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি উক্ত বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন। যদি না পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরী।২০৭৯১

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url