শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার দোয়া

আপনারা কি শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার দোয়া সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আমাদের আজকের এই পোস্টটি আপনাদের জন্য। নামাজে শয়তানের ওয়াসওয়াসা রোগের লক্ষণ স্বরূপ। তাই আজকে আমরা আলোচনা করব ওয়াসওয়াসা যখন রোগ তখন ওয়াসওয়াসা রোগ থেকে মুক্তির উপায়  এবং শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার দোয়া সম্পর্কে।
তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই, শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার দোয়া সম্পর্কে।

সূচিপত্রঃ শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার দোয়া

শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার দোয়া

মানুষের আজন্ম শত্রু হচ্ছে শয়তান। কেয়ামত অব্দি তার যুদ্ধ চলতেই থাকে। আল্লাহর সাথে সে এই ব্যাপারে শপথ করেছে। বিভিন্নভাবে শয়তান তার এই শপথকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চালিয়ে যায়। মুমিন ব্যক্তির ঈমানের মধ্যে সে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে থাকে। পবিত্রতা অর্জন করবার পর সেখানে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। বিভিন্নভাবে নামাজের মধ্যে বিভ্রান্ত করবার চেষ্টা করে থাকে। প্রতিনিয়ত তার চেষ্টা এভাবে চলতেই থাকে। সেজন্য আমাদের প্রিয় নবী সাঃ শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার দোয়া ও উপায় সম্পর্কে বলে গেছেন। দোয়াটি হচ্ছে-

আরবি উচ্চারণঃ لا اله الا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير:\

বাংলা উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি সাইয়িন কাদির।

অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি এক, তার কোন শরীক নাই, একমাত্র তারই রাজত্ব, সকল প্রশংসা শুধুমাত্র তারই জন্য, এবং সবকিছুর ওপর তিনি ক্ষমতাবান।

আরো পড়ুনঃ রমজানে ওজন কমানোর ডায়েট চার

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবী রাসূল সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি এই দোয়াটা একশ বার পাঠ করবে, দশটা গোলাম আজাদ করার সমান সওয়াব সেই ব্যক্তি পাবেন। সেই ব্যক্তির জন্য ১০০ টা গুনাহ মিটিয়ে ফেলা হবে এবং ১০০ সওয়াব লেখা হবে। সেদিন ওই ব্যক্তি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান থেকে নিরাপদে থাকবে। তার চাইতে কোন লোক উত্তম সওয়াবের কাজ করতে পারবেন না। যতক্ষণ না কোন ব্যক্তি এর চাইতে বেশি এই দোয়া পড়তে সক্ষম হবে। (সহিহ বুখারীঃ ৩২৯৩)

নামাজে শয়তানের ওয়াসওয়াসা

নামাজে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্তির বিষয়ে আলোচনা করব। একটা নামাজি ব্যক্তিকে শয়তান তার সর্বোচ্চ শক্তি বিনিয়োগ করে উদাসীন করার জন্য চেষ্টা করে থাকে। সেজন্য শয়তান খুব চোখোস ভাবে তার কুটকৌশল পরিচালনা করে থাকে। সেই শয়তানের নাম রাসূলুল্লাহ সাঃ বলে গেছেন। সেই শয়তানের নাম হচ্ছে খিনজাব। মানুষকে এই দুষ্টু খিনজাব জিন নামাজের মধ্যে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। আমাদের প্রিয় নবী রাসূল সাঃ তার এই কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন।

আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেছেন যে, নবী রাসূল সাঃ এর কাছে ওসমান ইবনে আবুল আস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমার কিরাত ও নামাজের মধ্যে শয়তান বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং সবকিছুতে কেমন জানি গোলমাল বাধায়। রাসুল সাঃ তখন বললেন, এটা এক প্রকারের শয়তান যার নাম হচ্ছে খিনজাব। তুমি যে সময় তার উপস্থিতি বুঝতে পারবে আউযুবিল্লাহ পড়ে তার অনিষ্ট থেকে তখন আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে নিবে। আর তোমার বাম পাশে তিনবার থুতু ফেলবে।

আরো পড়ুনঃ রোজা রেখে ওযু করার নিয়ম

তারপর তিনি বললেন, আমি এরকম করলাম আর আমার হতে তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দূর করে দিলেন। (সহীহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫৬৩১)। থুতু ফেলার কথা এখানে এসেছে। নামাজে দাড়িয়ে থুতু ফেলা বলতে কোন কিছু মুখ থেকে বার করতে হবে এমনটা নয়। বরং সামান্য একটু বাম দিকে মাথায় হেলিয়ে থুথু ফেলার ভঙ্গি করতে হবে। আর মনে মনে তার আগে তিনবার আউযুবিল্লাহ পড়ে নিতে হবে। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের কে তার খাঁটি বান্দা হিসেবে বেঁচে থাকার তৌফিক দিন।

ওয়াসওয়াসা রোগের লক্ষণ| ওয়াসওয়াসা যখন রোগ

শুচিবাই বা ওসিডি এবং ওয়াসওয়াসা রোগ প্রায় কাছাকাছি এ সকল সমস্যা। ওয়াসওয়াসা রোগ বলতে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের দ্বিধা সৃষ্টি করা। মূলত শয়তানের কাজই হচ্ছে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের দ্বিধা তৈরি করা ও কুমন্ত্রণা সৃষ্টি করা। ওয়াসওয়াসা রোগের লক্ষণ বা ওয়াসওয়াসা যখন রোগ তখন মানুষকে কারণে-অকারণে চিন্তিত রাখবে। এছাড়াও বিভিন্ন কারণ রয়েছে যা নিয়ে আলোচনা করা হলো-

  • কারণে-অকারণে আপনি ইদানিং চিন্তিত থাকবেন।
  • বিক্ষিপ্ত চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরাঘুরি করবে।
  • দৈনন্দিন কাজ, নামাজ, জিকির, ইবাদত, তেলাওয়াত ইত্যাদিতে মন বসবে না।
  • আপনি বা আপনাদের পরিবারের কেউ হঠাৎ করে পরিবর্তন হয়ে যাবে। কেমন একটা উদাসীন ভাব চলে আসবে, কোন কিছুই ভালো লাগবে না।
  • কেন জানি সালাত ও অজু নিয়ে বেশি দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগবেন। বারবার ঠিক ভুল মনের মধ্যে আসবে।

ওয়াসওয়াসা রোগ থেকে মুক্তির উপায়

উপরে আমরা শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার দোয়া সম্পর্কে জেনেছি। এখন ওয়াসওয়াসা রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানব। শয়তানের ওয়াসওয়াসা হলে সর্বপ্রথম আমরা আউযুবিল্লাহ পরে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবো এবং এ সকল বিষয়ে চিন্তা করা থেকে বিরত থাকবো। এছাড়াও ওয়াসওয়াসা রোগ থেকে মুক্তির উপায় গুলো নিচে দেওয়া হল-

আরো পড়ুনঃ আজকের সেহরি ও ইফতারের সময় সিলেট ২০২৩

  • আয়াতুল হারক অর্থাৎ জাহান্নাম এবং আজাব সংক্রান্ত আয়াত তেলাওয়াত করতে হবে বেশি বেশি কিংবা এ তেলাওয়াত গুলো প্রতিদিন চার-পাঁচবার করে শোনা।
  • নাপাক থেকে বাঁচা, বিশেষ করে প্রসাবের ছিটা থেকে বেঁচে থাকা এবং যতটুকু সম্ভব ওযু অবস্থায় সব সময় থাকা।
  • ছেলেমানুষ হলে নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা। মুত্তাকিদের সাথে চলাফেরা করা।
  • আমল গুলো খুব গুরুত্বের সাথে সকাল সন্ধ্যা ও ঘুমের আগে পাঠ করা।
  • পায়খানাতে প্রবেশ এবং বাহির হওয়ার দোয়া পড়া।
  • সবসময় আল্লাহর দরবারে দোয়া পাঠ করতে থাকা। যতটুকু সম্ভব শয়তানের ওয়াসওয়াসায় পাত্তা না দেয়া। এড়িয়ে চলা এবং বিরক্তির ভাব ও মুখে প্রকাশ না করা।

শেষ কথাঃ শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার দোয়া

শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার দোয়া নামাজে শয়তানের ওয়াসওয়াসা যখন রোগ এবং ওয়াসওয়াসা রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের পুরো পোষ্টটি ভালোভাবে পড়ুন, আশা করি সবকিছু ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার দোয়া সম্পর্কে সবার আগে জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন।

আজ আর নয়, শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার দোয়া সম্পর্কে আপনার কোন কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আশা করি আমরা আপনার উত্তরটি দিয়ে দেবো। তাহলে আমাদের আজকের এই শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার দোয়া সম্পর্কে পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে আমাদের পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ। ২৩৭৬৬

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url