কাঁচা হলুদের ৫০টি গুনাগুন সম্পর্কে জানুন
এই আর্টিকেল থেকে কাঁচা হলুদের ৫০টি গুনাগুন সম্পর্কে জানতে পারবেন। কাঁচা হলুদের গুণাগুণ সম্পর্কে অনেকেরই স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। তাই এই আর্টিকেল সম্পূর্ণ পড়ে আপনারা কাঁচা হলুদের ৫০টি গুনাগুন সম্পর্কে জানুন। সুতরাং, আজ আপনারা কাঁচা হলুদের ৫০টি গুনাগুন সম্পর্কে জানুন যেন কাঁচা হলুদের সকল গুণাগুণ আপনারা কাজে লাগাতে পারেন।
হলুদকে অনেকসময় "মিরাকল হার্ব" বা অলৌকিক ভেষজ বলা হয়। হলুদ আমাদের অতি সুপরিচিত মশলা কেননা হলুদ ছাড়া প্রতিদিনের রান্না কল্পনাই করা যায় না। এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে আপনারা কাঁচা হলুদের ৫০টি গুনাগুন সম্পর্কে জানুন এবং কাঁচা হলুদ কি কি কাজে লাগানো যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত হয়ে নিন।
পোস্ট সূচিপত্র - কাঁচা হলুদের ৫০টি গুনাগুন সম্পর্কে জানুন
কাঁচা হলুদের উপাদানসমূহ - কাঁচা হলুদ কোনগুলো?
হলুদ গাছের শিকড় থেকে প্রাপ্ত এক প্রকার মসলা যা গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে বেশ জনপ্রিয় সেটিই হলো হলুদ। এটি আদা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। হলুদ গাছের শিকড়কে কয়েক ঘন্টা সিদ্ধ করা হয়, অতঃপর তা গরম চুলাতে শুকানো হয়। হলুদের সবচেয়ে সক্রিয় উপাদান হলো Curcumin. গবেষণায় দেখা গেছে হলুদের এত এত ঔষধি গুণ রয়েছে যে, তা অন্তত ৬০০ টি রোগের মহাঔষধ হিসেবে কাজ করে। কাঁচা হলুদের অ্যান্টিসেপটিক গুণও রয়েছে।
কাঁচা হলুদে অবস্থিত উপাদান কারকিউমিনের অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে খাদ্যনালিকে রক্ষা করে থাকে। কাঁচা হলুদের অন্যতম উপাদান কারকিউমিন ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষভাবে সহায়ক। হলুদের প্রধান উপাদান কারকিউমিন হলুদের গুড়োতে প্রায় ৩.১৪% আকারে থাকে। হলুদে কিছু পরিমাণ চিনি, প্রোটিন ও রেসিন থাকে। পোস্টের পরবর্তী অংশে কাঁচা হলুদের ৫০টি গুনাগুন সম্পর্কে জানুন।
কাঁচা হলুদের ৫০টি গুনাগুন সম্পর্কে জানুন
রূপচর্চা হোক বা রান্না হলুদের যেন জুড়ি মেলা ভার। প্রাচীনকাল থেকেই হলুদকে ঘরোয়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। হলুদের এত এত গুনাগুণ রয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না। এবার আপনারা কাঁচা হলুদের ৫০টি গুনাগুন সম্পর্কে জানুন।
- কাঁচা হলুদ হলো প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক। কোন স্থান কেটে বা পুড়ে গেলে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।
- কাঁচা হলুদ স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং অন্ত্রের ক্যান্সার নিরাময় সাহায্য করে।
- শিশুদের লিউকেমিয়া ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
- প্রোস্টেট ক্যান্সার হলে কাঁচা হলুদ তা প্রতিরোধ করে থাকে।
- আত্মহত্যার প্রবণতা সৃষ্টিকারী মেলানোমা প্রতিরোধ করে।
- বাত রোগের মহৌষধ হিসেবে কাঁচা হলুদ কাজ করে থাকে
- গবেষণা থেকে প্রমাণিত অগ্নাশয় ক্যান্সার প্রতিরোধে কাঁচা হলুদের ভূমিকা অপরিসীম।
- হলুদ কেমো ড্রাগের প্রভাব ও তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত রাখে।
- টিউমার বন্ধ হওয়া ও নতুন রক্ত উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
- হলুদের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে তা ডায়াবেটিস কমায়।
- এটি চর্বি বিপাকে সাহায্য করে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- বিষন্নতা রোগের চিকিৎসা হিসাবে কাঁচা হলুদ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে বাহিরের দেশে।
- কাঁচা হলুদের সাথে দুধ মিশিয়ে তা শরীরে মাখলে সকল প্রকার চর্মরোগ, এজমা, হাঁপানি, এলার্জি দূরীভূত হয।
- কাঁচা হলুদ মানসিক বিষন্নতা কমিয়ে এন্টিডিপ্রেসান্ট হিসেবে কাজ করে।
- কাঁচা হলুদ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বাচ্চাদের লিউকেমিয়া ও ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
- কাঁচা হলুদ গুড়া করে শরীরে মাখলে তা গায়ের রং ফর্সা করে। ত্বককে উন্নত করে।
- হলুদের এক বিশেষ উপাদান পলিফেনল, চোখের 'ক্রনিক অ্যান্টিরিয়ার ইউভেটিস' তথা চোখ জ্বালাপোড়া রোগের উপশম ঘটায়।
- মুখ জ্বালাপোড়া করলে গরম পানিতে হলুদ মিশিয়ে কুলকুচা করুন।
- আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা মতে হলুদ খেলে তা রক্ত পরিশুদ্ধ করে।
- শরীরের পোড়া অংশের ঘা কমাতে পানিতে হলুদ মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
- সূর্যের তাপে গা জ্বলে গেলে, হলুদ পাউডারের মধ্যে দই ও বাদাম চূর্ণ মিশিয়ে লাগান।
- ডায়রিয়ার এর ক্ষেত্রে পানিসহ হলুদ খেলে তা উপকারে আসে।
- পেটের সংক্রমণ দূর করতে ও পেট পরিষ্কার রাখতে মাখনের সাথে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে খান।
- কাঁচা হলুদের রসে ২০-২৫ ফোঁটা লবণ মিশিয়ে সকালে নিয়মিত খেলে পেটের কৃমি দূর হয়।
- জন্ডিস রোগ হয়ে গায়ের রং ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করলে মধুতে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে খেলে ব্যাপক উপকার পাবেন।
- যাদের তোতলামির সমস্যা আছে, তারা যদি কাঁচা হলুদ চেটে চেটে খান তবে কথা বলার যাবতীয় সমস্যা দূর হবে।
- কাঁচা হলুদ শরীরের হজম প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে এবং আমবাত প্রতিরোধ করে।
- কাঁচা হলুদ সিদ্ধ করে নিয়ে তার পানি ছেঁকে চিনিসহ অল্প অল্প পান করলে শ্লেষ্মাজনিত পানি পিপাসা দূর হয়।
- কবিরাজি ও ভেষজ চিকিৎসার বিভিন্ন ঔষধ প্রস্তুতির অন্যতম প্রধান উপাদান হলো এই কাঁচা হলুদ।
- কাঁচা হলুদ বৃক্কের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রস্রাব স্বাভাবিক রাখে।
- নাকের ভেতর ক্ষত হলে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- কাঁচা হলুদের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে তা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করতে সাহায্য করে।
- শরীরে জোঁক আক্রান্ত হলে কাঁচা হলুদ সেখানে লাগিয়ে দিতে পারে। দ্রুতই জোঁক পালিয়ে যাবে।
- গরম দুধে কিছুটা পরিমাণ কাঁচা হলুদের গুঁড়ো দিলে সেটি কন্ঠস্বর পরিষ্কার রাখতে ও গলা বসা দূর করতে সহায়ক।
- কাঁচা হলুদ ভালোভাবে প্রসেসিং করে সেটি মুখে মাখলে মুখের ব্রণ ও অন্যান্য দাগ দূর হয়।
- ত্বক ঝুলে পড়া, ত্বকের রোগ ও অন্যান্য চর্মরোগ দূর করতে কাঁচা হলুদের জুড়ি মেলা ভার।
- শরীরের বিভিন্ন স্থানের অবাঞ্ছিত দাগ দূর করতে কাঁচা হলুদ ভূমিকা রাখে।
- এছাড়া শরীরের অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে কাঁচা হলুদে পানি মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
- শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা হলে নিয়ামক হিসাবে হলুদের পেস্ট তৈরি করে তার প্রলেপ দিতে পারেন।
- শরীরের ত্বকে অন্যরকম কাঁচা হলুদ ও কমলার খোসা একসাথে বেটে মাখতে পারেন।
- বেশি বেশি হলুদ খেলে একটা মোটা হওয়া প্রতিরোধ করে। যারা ওজন কমাতে চান তারা কাঁচা হলুদ নিয়মিত খেতে পারেন।
- সর্দি কাশি হলে কাঁচা হলুদ মুখে রেখে চুষুন। এছাড়া দুধে কাঁচা হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন।
- চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে কাঁচা হলুদের সাথে মাখন মিশিয়ে চোখের নিচে ব্যবহার করতে পারেন।
- হলুদের গুঁড়া, সরিষার তেল ও আখের গুড় একসাথে মিশিয়ে খেলে তা হাঁপানি রোগ প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।
- হলুদের প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, আয়রন ও ফসফরাস থাকে যা আমাদের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- শরীরে পুষ্টি উপাদান সরবরাহে কাঁচা হলুদ যেন এক প্রকার আশীর্বাদস্বরুপ।
- আমাদের রান্নার স্বাদ বাড়িয়ে দিতে এই হলুদের বিকল্প কিছুই নেই। যেকোনো প্রকার তরকারিতে হলুদ থাকলে তরকারি বেশি স্বাদ হয়।
- বাইরের যেকোনো রোগ জীবাণু প্রতিরোধ করে আমাদের দেহকে সুস্থ রাখতে কাঁচা হলুদের ভূমিকা অপরিসীম।
- চোখ ও হার্টের রোগীদের কাঁচা হলুদ খাওয়া যেতে পারে। এটি হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের কার্যকরী।
- হেপাটাইটিস বি এক প্রকার জটিল রোগ। বহু গুণাগুণ সমৃদ্ধ কাঁচা হলুদ হেপাটাইটিস বি এর বিরুদ্ধেও যেন এক অতন্দ্র প্রহরী।
কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয়
প্রিয় বন্ধুরা আপনারা কাঁচা হলুদের ৫০টি গুনাগুন সম্পর্কে জানুন কিন্তু কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয় সেটিও জেনে রাখুন। সবকিছুতেই কম বেশি পার্শপ্রতিক্রিয়া রয়েছে তাই কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হতে পারে এবার চলুন সেটি জেনে নেওয়া যাক।
- হলুদ বেশ জ্বালা সৃষ্টিকারী একপ্রকার মসলা। তাই অতিরিক্ত হলুদ খেলে পেট জ্বালাপোড়া করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি পেটের সমস্যা ও আলসারের কারণ হিসেবে অনেকে হলুদকে দোষারোপ করে থাকে।
- হলুদের ভেতরে থাকা অক্সালেট ক্যালসিয়ামগুলিকে বাঁধাই করে ফেলে। হলে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে পারে।
- হলুদে অবস্থিত উপাদান কারকুমিন অনেক সময় হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। তবে পরিমিত হলুদ খেলে এ সমস্যা হয় না।
- কোন কিছুর অতিরিক্ত ব্যবহারই ঠিক নয়। ত্বকে অধিক পরিমাণ হলুদ ব্যবহার করলে সেটি আপনার ত্বক ফাটার কারণ হতে পারে।
- কাঁচা হলুদ অধিক খেলে শ্বাসকষ্টের সমস্যাও সৃষ্টি হতে দেখা যায়।
- কাঁচা হলুদ দেহে আয়রন শোষণ বাধাগ্রস্থ করতে পারে।
কাঁচা হলুদ মুখে মাখলে কি হয়?
এই পোস্টের উপরের অংশ থেকে আপনারা কাঁচা হলুদের ৫০টি গুনাগুন সম্পর্কে জানুন। অতঃপর এখন চলুন কাঁচা হলুদ মুখে মাখলে কি হয় জেনে নিন। কাঁচা হলুদ মুখে মাখলে এটি মুখের ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। এটি ত্বকের প্রদাহের সমস্যা দূর করে এবং মুখ থেকে সকল প্রকার দাগ ও ব্রণ দূর করে ফেলে। ত্বকে সৃষ্ট বলিরেখা থেকে মুক্তি পেতে কাঁচা হলুদ মুখে মাখা যেতে পারে। কাঁচা হলুদ মুখে মাখলে কি ধরনের উপকার পাবেন তা আপনারা জেনে ফেললেন।
শেষ কথা - কাঁচা হলুদের ৫০টি গুনাগুন সম্পর্কে জানুন
প্রিয় বন্ধুরা, পরিশেষে বলব এই পোস্টটি আবারও পড়ে আপনারা কাঁচা হলুদের ৫০টি গুনাগুন সম্পর্কে জানুন। অতঃপর সেই অনুযায়ী কাঁচা হলুদ ব্যবহার করে গুনাগুন গুলো থেকে সুবিধা ভোগ করুন। কাঁচা হলুদের এত এত গুনাগুনের কারণে এটিকে প্রাকৃতিক ভেষজ হিসেবেই অভিহিত করা হয়। তাই আমাদের সকলেরই প্রয়োজনমাফিক কাঁচা হলুদ ব্যবহার করা উচিত। পোস্টটি ভালো লাগলে সকলের সাথে শেয়ার করে ফেলুন। বিভিন্ন উপাদানের বাস্তবধর্মী গুনাগুন সমৃদ্ধ আরও পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। @23891
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url