কত টাকা হলে যাকাত ফরজ - ১ লাখ টাকায় যাকাত কত
কত টাকা হলে যাকাত ফরজ হয় এ ব্যাপারে অনেকেই বিভিন্ন প্রশ্ন করে থাকেন। যাকাত যেহেতু সামর্থ্যবান মুসলিমদের উপরে ফরজ সেহেতু কত টাকা হলে যাকাত ফরজ হয়, এ বিষয়টি জেনে নেওয়া আবশ্যক। ১ লাখ টাকায় যাকাত কত এই প্রশ্নটির উত্তরও অনেকে জানতে চান। আজ আপনাদের সামনে কত টাকা হলে যাকাত ফরজ হয় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
যাকাত ইসলামের অন্যতম ফরজ ইবাদত। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে অসংখ্য বার যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। আজ আপনাদের জন্য এই পোস্টে কত টাকা হলে যাকাত ফরজ, ১ লাখ টাকায় যাকাত কত, যাকাতের নিসাব কত টাকা ২০২৩, কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ ইত্যাদি বিষয়গুলো কুরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা করব। তাই পরিপূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পুরো পোস্টটি পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র - কত টাকা হলে যাকাত ফরজ | ১ লাখ টাকায় যাকাত কত জেনে নিন
যাকাত কী - যাকাতের নিসাব বলতে কি বোঝায়
কোনো ব্যক্তির নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার একটি সুনির্দিষ্ট অংশ গরীব-দুঃখীরদের হক হিসাবে দিয়ে দিতে হয়, এটিই ইসলামী পরিভাষায় যাকাত নামে পরিচিত। সাধারণত রমজান মাসেই যাকাত দেওয়া হয়ে থাকে। যাকাত দেওয়ার একটি পরিপূর্ণ বিধান ইসলামে রয়েছে। সে বিধান অনুযায়ী যাকাত দেওয়া ফরজ।
কোনো ব্যক্তির কাছে তার সকল ব্যয় নির্বাহের পর যদি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সম্পদ বর্তমান থাকে তবে সেই পরিমাণ সম্পদই হলো যাকাতের নিসাব। নিসাব পরিমাণ সম্পদ হয়ে গেলে তার অবশ্যই যাকাত দিতে হবে নতুবা গুনাহ হবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে নামাজের পর সর্বাধিক ৩২ বার যাকাত আদায় করার তাগিদ দিয়েছেন। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যাকাত আদায়ের কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছেন। সুতরাং, যাকাতের তাৎপর্য অপরিসীম। চলুন এবার জেনে নিই কত টাকা হলে যাকাত ফরজ হয়।
কত টাকা হলে যাকাত ফরজ | যাকাতের নিসাব কত টাকা ২০২৩
কত টাকা হলে যাকাত ফরজ এটি বর্তমানে সবারই সাধারণ প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে। ইসলামি শরিয়তে কারো নিকট সাড়ে ৭ তোলা সোনা অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রূপা অথবা এর সমান টাকা থাকলে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরজ। সোনা ও রূপার দামের উর্ধগতি ও নিম্নগতি অনুসারে যাকাতের নিসাবের পরিবর্তন হতে পারে। ২০২৩ সালের বাজার দর অনুযায়ী সোনার দাম ক্রমশই বাড়ছে।
সুতরাং যাকাতের নিসাব কত টাকা হবে ২০২৩ সাল অনুযায়ী তা সোনার বাজারদরের সাথে সমন্বয় করে, বিশেষজ্ঞ ইসলামিক স্কলারের পরামর্শ অনুযায়ী বের করতে হবে। তবে ব্যক্তির সর্বমোট সম্পদের ২.৫ শতাংশ যাকাতের হার হিসাবে নির্ধারিত। সে হিসাবে সোনার বাজারদর যাই হোক না কেন সেই টাকার ২.৫ শতাংশ যাকাত দিতে হবে।
১ লাখ টাকায় যাকাত কত দিবেন?
কত টাকা হলে যাকাত ফরজ তা নিশ্চয়ই জেনে গিয়েছেন। এবার চলুন জেনে নিই ১ লাখ টাকায় যাকাত কত টাকা দিতে হবে। যাকাতের হিসাব মূলত মোট সম্পদের ২.৫ শতাংশ। সে হিসাবে ১ লক্ষ টাকার ২.৫ শতাংশ হিসাব করলে দাঁড়ায় ২৫০০ টাকা। অতএব, ১ লাখ টাকায় ২৫০০ টাকা যাকাত আদায় করতে হবে। নিসাব পরিমাণ সম্পত্তির ৪০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত হিসাবে দিয়ে দিতে হবে। এটিই ইসলামের বিধান।
কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ
কারো কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পত্তি থাকলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে। এছাড়া ব্যবসার জন্য মজুদকৃত যে কোনো পণ্যের উপর যাকাত আদায় করতে হবে। আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন কত টাকা হলে যাকাত ফরজ হয়। চলুন কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ সেগুলো বিস্তারিত জেনে নিই।
নগদ অর্থ: ব্যাংক নোট অর্থাৎ টাকা, ডলার, রিয়াল ও অন্যান্য মুদ্রা যা নগদ অর্থ হিসেবে পরিচিত তার উপর যাকাত আদায় করা ফরজ। এছাড়াও অর্থের সাথে সম্পৃক্ত যেমন: বিনিয়োগ পত্র, চেক, বিল, সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজপত্র যার বৈষয়িক একটি মূল্য রয়েছে তার ওপর যাকাত দিতে হবে। মোট কথা যার মূল্য নগদ টাকা দ্বারা নির্ধারণ করা যায় তার উপর যাকাত দিতেই হবে।
ফল ও ফসলাদি: পবিত্র হাদিসে মূলত ৪ টি ফসলের নাম উল্লেখ করে যাকাত নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো যথাক্রমে গম, যব, খেজুর ও কিসমিস। এগুলোর উপর যাকাত দেওয়া ফরজ। এগুলো ফসল ব্যতীত যে সব ফল ও ফসল সঞ্চয় করার উপযুক্ত ও আর্থিক মূল্য রয়েছে এবং ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করলে নষ্ট হয় না, যেমন- ভুট্টা, ধান, চাল ও অন্যান্য খাদ্যশস্য তাতেও যাকাত দেওয়া ওয়াজিব হবে। শাক-সবজির ওপর যাকাত দানের কোনো নির্দেশনা নেই। তবে কাঁচাখেজুর ও আঙ্গুরের ওপর যাকাত দিতে হবে, কেননা তা সঞ্চয় করা যায়।
ব্যবসায়িক পণ্য: অধিকাংশ আলেম ও মুহাদ্দিসদের ভাষ্য মতে যে কোনো ব্যবসায়িক পণ্যের উপর যাকাত প্রদান করা ওয়াজিব। যে সকল পণ্য বা বস্তু দিয়ে ব্যবসা করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় যেমন: জমি, গাড়ি ও ব্যবসার অন্যান্য সামগ্রী/পণ্য যা কেনাবেচা করার উপযুক্ত তার উপর যাকাত আদায় করতে হবে।
চতুষ্পদ প্রাণী: হাদিস শরীফে চতুষ্পদ প্রাণী হিসাবে উট, গরু ও ছাগলের যাকাত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সব প্রাণী ছাড়া অন্যান্য চতুষ্পদ প্রাণীর যাকাতের কথা হাদীসে উল্লেখ নেই। সুতরাং আপনার গৃহপালিত পাখি, মুরগি, ঘোড়া, গাধা, খরগোশ ও অন্যান্য প্রাণী থাকলে তাতে যাকাত দিতে হবে না এবং তার সংখ্যা যত বেশিই হোক না কেন। তবে এ সব প্রাণী যদি কেবল ব্যবসার জন্য নির্ধারিত হয় তবে ব্যবসায়ী পণ্য হিসেবে তাতে যাকাত আদায় করা ওয়াজিব হিসাবে গণ্য হবে।
শেষ বক্তব্য - কত টাকা হলে যাকাত ফরজ - ১ লাখ টাকায় যাকাত কত
সম্মানিত পাঠক, আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনি যাকাত আদায় করার যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে ধারণা পেয়ে গেছেন। এই পোস্টে আমরা কত টাকা হলে যাকাত ফরজ, ১ লাখ টাকায় যাকাত কত, যাকাতের নিসাব কত ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়ে থাকলে অন্যদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও জানার সুযোগ করে দিন। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক নিয়মে যাকাত আদায় করার তৌফিক দান করুন। @23891
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url