সালাম দেওয়ার নিয়ম - সালামের সঠিক উচ্চারণ

সালাম দেওয়ার নিয়ম ও সালামের সঠিক উচ্চারণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই পুরোপুরি অবগত নই যদিও দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রচুর সালাম আদান প্রদান করে থাকি। আজ এই আর্টিকেল থেকে আপনারা সালাম দেওয়ার নিয়ম ও সালামের সঠিক উচ্চারণ সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে পারবেন। তাই দেরি না করে পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
ইসলামে অপর ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া সুন্নাত এবং সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। সুতরাং সালাম আদান প্রদানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। তবে আমরা সালাম আদান প্রদানে অজান্তেই বিভিন্ন ভুল করে থাকি। সালাম দেওয়ার নিয়ম ও সালামের সঠিক উচ্চারণ, সালাম দেওয়া কি ওয়াজিব, সালামের উত্তর বাংলা, সালাম দেওয়ার নিয়ম আরবি এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়েই আজকের এই পোস্ট।

পোস্ট সূচিপত্র | সালাম দেওয়ার নিয়ম - সালামের সঠিক উচ্চারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

মুসলিমরা অন্যকে অভিবাদন জানাতে আরবিতে "আস-সালামু আলাইকুম" বলে থাকে। এর অর্থ হলো:- 'আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক'। সংক্ষিপ্তভাবে আরবিতে আমরা এটুকু বলেই সালাম আদান-প্রদান করে থাকি। অনেকে এই সংক্ষিপ্ত সালাম দেওয়ার সময়েও ভুল উচ্চারণ করে থাকে। যা সালামের আদব নষ্ট করে।
আমরা প্রত্যেকদিনই সালামের বিচিত্র সব উচ্চারণ যেমন: 'সালামালেকুম, স্লামালিকুম' ইত্যাদি শুনে থাকি। ইহা কখনোই কোনো অর্থ নির্দেশ করে না। সালামের অর্থ নির্দেশ না করলে তা একটি অনর্থক বিষয় হিসাবেই পরিগনিত হয়। তাই সালামের সঠিক উচ্চারণ ও সালাম দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের সম্যক জ্ঞান রাখা অপরিহার্য। সে সকল নিয়মকানুন পোস্টটির পরবর্তী অংশে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

সম্পূর্ণ সালাম দেওয়ার নিয়ম - সালামের সঠিক উচ্চারণ  - সালাম দেওয়া কি ওয়াজিব

সালাম একটি দোয়া ও আমল। আপনি কাওকে সালাম দিলে তা সুন্নাত ইবাদত হিসাবে গণ্য হবে। আর সালামের উত্তর গ্রহণ করা ওয়াজিব। অনেকে জিজ্ঞেস করে থাকেন সালাম দেওয়া কি ওয়াজিব? না সালাম দেওয়া ওয়াজিব নয়। বরং, সালামের উত্তর দেওয়াই ওয়াজিব ইবাদাত। আমরা শুধু সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রেই যে ভুল করি ব্যাপারটা এমন নয়। আমরা সালামের উত্তর দেওয়ার সময়ও উচ্চারণগত বিভিন্ন ভুল করে থাকি। যেমন: 'অয়ালিকুম সালাম, অয়ালাই কুম সালাম' ইত্যাদি। চলুন সালাম দেওয়ার নিয়মগুলো পরিপূর্ণ ভাবে জেনে নিই।
সালাম দেওয়ার ইসলামী শরিয়তসম্মত তিনটি নিয়ম রয়েছে।
  1. সর্বোচ্চ স্তরের সালাম: আরবিতে 'আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু' (অর্থ: আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক।) বলাই সালাম দেওয়ার নিয়ম হিসাবে একদম পূর্ণাঙ্গ। এটিকে সর্বোচ্চ স্তরের সালামও বলা হয়।
  2. এর চেয়ে নিম্নস্তরের সালাম: কেউ পূর্নাঙ্গ সালাম দিতে না পারলে 'আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ' (অর্থ: আপনার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক) এতটুকু বলেও সালাম দিতে পারে।
  3. সর্বনিম্ন স্তরের সালাম: কেউ যদি কোনো পরিস্থিতিতে পূর্নাঙ্গ সালাম দিতে অপারগ হয় তবে 'আসসালামু আলাইকুম' (অর্থ: আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) বলার বিধান রয়েছে।
উল্লেখিত এই ৩ টি পদ্ধতিই মূলত সালাম দেওয়ার সঠিক উচ্চারণ নির্দেশ করে। আপনারা সালাম দিলে হুবহু এই তিনটি পদ্ধতিতে সহীহ্ উচ্চারণের সহিত সালাম দিবেন। সালামের সঠিক উচ্চারণ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, "আর যখন তোমাদের সালাম দেওয়া হবে, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে অথবা জবাবে তাই দেবে।" [সূরা নিসা- আয়াত: ৮৬]। সুতরাং, সালামের সঠিক উচ্চারণের ব্যাপারে আল্লাহতা'আলার পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হয়েছে। আমরা তাই এই আয়াত যথাযথভাবে মেনে চলবো।

সালামের উত্তর ছবি দেখুন

কেউ সালাম দিলে উত্তর আমরা অত্যন্ত সুন্দর উচ্চারণে মহব্বতের সহিত দেব। সালামের উত্তর ছবি তথা সালাম আদানপ্রদানের ছবি নিচে খেয়াল করুন।
এই ছবিটিই আপনি সালাম দেওয়ার নিয়ম হিসাবে অনুসরণ করতে পারেন।

সালামের উত্তর বাংলা | সালাম দেওয়ার বিধিবিধান 

সম্মানিত ভাই ও বোনেরা, সালাম দেওয়ার নিয়ম আপনারা ইতোমধ্যে শিখে ফেলেছেন। এবার সালামের উত্তর বাংলায় কেমন হবে জেনে নিন। সালামের উত্তর প্রদান করার সময় 'ওয়া আলাইকুমুস সালাম' (অর্থ: আপনার উপরও শান্তি বর্ষিত হোক।) এটি সঠিক উচ্চারণে বলতে হবে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, "তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নির্বিশেষে সকলকে সালাম প্রদান করবে।" [বুখারী ও মুসলিম শরীফ] 
সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কিছু বিধিবিধান মেনে চলবো।
  • আজানরত, ইকামত দেওয়া অবস্থায়, খুৎবারত এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ যে অবস্থায় সালাম দিলে তার সমস্যা হবে এমন কোন ব্যক্তিকে সালাম প্রদান করা যাবেনা।
  • ওয়াশরুমে থাকা কোনো ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
  • স্ত্রীর সাথে একান্ত সময় কাটানোরত অবস্থায় কাওকে দেখলে সালাম না দেওয়াই ভাল।
  • অমুসলিম ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
  • নামাজরত কোনো ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া যাবে না। এতে তার নামাজ ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা থেকে যায়।
  • কেউ খাবার খাওয়া অবস্থায় সালাম দেওয়া যাবেনা।
  • জরুরি হিসাব নিকাশে ব্যস্ত কাউকে সালাম না দেওয়া উত্তম। কারণ এতে তার হিসাবে ভুলভ্রান্তি হয়ে যেতে পারে।
  • কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ নছীহতে ব্যস্ত কাউকে সালাম দেওয়া যাবেনা।
  • এছাড়া অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে যেকোনো ব্যক্তির সাথে দেখা হলে সালাম দেওয়া অতি উত্তম কাজ। যা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। 

ইতিকথা - সালাম দেওয়ার নিয়ম - সালামের সঠিক উচ্চারণ  

প্রিয় জ্ঞান পিপাসু ভাই ও বোনেরা আপনারা সালাম দেওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে ইতোমধ্যে অনেকটাই অবগত হয়ে গেছেন। আশা করি সালাম দেওয়ার নিয়ম, সালামের সঠিক উচ্চারণ, সালামের যাবতীয় বিধিবিধান আপনাদের সামনে স্পষ্ট হয়েছে। এ অনুযায়ী সালাম আদান-প্রদান করলে সামাজিকভাবে আপনি উন্নত মানসিকতার মানুষ হতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। @23891

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url